'আত্নসমালোচনা' কি কেন কিভাবে?



প্রিয় পাঠক আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি সবাই আল্লাহ এর অশেষ রহমতে ভালই আছেন। মানুষ মাত্রই ভুল এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা আমরা কয়জন করি? মানুষ ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষের এই দোষ, গুণ, ভুল-ত্রুটি নিয়ে আমরাই আবার একে অপরের কাছে সমালোচনা করে বেড়াই। কিন্তু মানুষের এই সমালোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা নিজেদেরকে সংশোধনের চেষ্টাও করি। কিন্তু এখানে আপনারা একটা বিষয় ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবেন যে অন্যের সমালোচনা শুনে নিজেকে শুধরানোর চেয়ে যদি আমরা আগেই বদলে যেতাম তাহলে তো আর আমাকে অন্যের সমালোচনা শুনতে হতো না। এটাকেই বলে নিজেকে নিজে আত্নশুদ্ধি করা, নিজের সাথে কথা বলা, নিজের মনকে নিজে প্রশ্ন করা যে, আমি কাজটি ভুল করছি নাকি সঠিক? নিজেকে নিয়ে নিজের সাথে আত্নপর্যালোচনা করা, আর যাকে আমরা বলছি আত্নসমালোচনা

আপনার মনকে যদি আপনি বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে সারাদিনের কাজের হিসাব চেয়ে প্রশ্ন করেন তাহলে আপনি আপনার ভাল ও মন্দ কাজের কারণ গুলো জানতে পারবেন। তখন আপনি আবিস্কার করতে পারবেন আপনার মনে 'আমি' নামক এক সত্তা থাকে। সেই 'আমি'র আমিত্ব পশুর মতো। আপনি যদি তাকে নিয়ন্ত্রন না করেন তাহলে সে পশুর মতো আচরণ করবে। আপনাকে মন্দ কাজ করার জন্য আগ্রহ জাগাবে। একজন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কখনোই এমনটা চাইবেনা। এখন কথা হলো, আমরা যেন নিজেরাই নিজের ভুলটা বুজতে পারি, আরেকজন আমাকে নিয়ে সমালোচনা করার আগে, আমাকে নিয়ে দুটো কথা বলার আগেই যেন আমি নিজকে নিজে সংশোধন করে নিতে পারি। এর জন্য দরকার আমার কোনটা ভালো কাজ যা আমি অব্যাহত রাখব, আর কোন কাজটি আমার মন্দ, যা থেকে আমি বিরত থাকব, সে সব বিষয় নিয়ে ভাবা। নিজের কাছে নিজের জবাবদিহিতা চাওয়া। মূলত নিজের বিবেকের সাথে নিজেকে নিয়ে আত্নসমালোচনা করা।


আত্নসলোচনার পারিভাষিক অর্থ,কোন কাজ করা বা ছাড়ার পূর্বে এমনভাবে সচেতন থাকা, যেন আমি কী করতে যাচ্ছি বা কী ছাড়তে যাচ্ছি তা আমার কাছে স্পষ্ট থাকে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, আমি ভাল খারাপ যাই করি না কেন এর জন্য আলাদা করে এই আত্নসমালোচনা করার কি দরকার? চলুন এবার আমরা এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

পার্থিব জগতে তথা ইহকালে আমাদেরকে তো কি ভাল কি মন্দ কাজ করলাম তার জন্য কারো কাছে জবাবদিহি করা লাগেনা। কিন্তু মৃত্যুর পরের চিরস্থায়ী জগত পরকালে এর জন্য আল্লাহ এর কাছে জবাব দিতে হবে। পবিত্র কোরআনেও আত্নসমালোচনার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। ‘মুহাসাবাতুন নাফস’ বা আত্মসমালোচনাকে প্রতিটি মুমিনের জন্য 
অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ সূরা হাশরের ১৮ নং আয়াতে বলেন
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিৎ- আগামী কালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন (অর্থাৎ তারা কোন কাজটি ভাল, কোনটি মন্দ তা বাছাই করা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে)। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক  (হাশর ১৮)

➤➤   চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আত্নসমালোচনা করবো তার পদ্ধতি। মূলত ২ টি উপায়ে আত্নসমালোচনা বা 'মুহাসাবা' করা যায়।
👉 কোন কাজ করার আগে ঐ কাজের গুরূত্ব, প্রভাব, ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের দিক বিবেচনা করে আত্নসমালোচনা করা।
👉 কোন কাজ শেষ করার পর ঐ কাজ সততার সাথে করা হয়েছে কিনা, কাজের মূল উদ্দেশ্য অর্জন হলো কিনা তা নিরবে বসে আত্নসমালোচনা করা।


➤➤   আমরা সব কিছুরই ভাল মন্দ বুঝি তারপর ও অমান্য করি। আত্নসমালোচনা করতেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হই। চলুন জেনে নেই তার কারণঃ
👉 পাপ কাজ করতে করতে অন্তরে মরীচিকা পড়া। তখন ছোট খাট গুনাহের কাজও আমাদের কাছে অতি সাধারণ কাজের মত মনে হয়। মন থেকে একটুও তখন আর অনুশুচনা তৈরী হয়না।
👉 দুনীয়াবি কাজে মগ্নতা।
👉 নিজের প্রতি সুধারণা রাখা। নিজের দোষ ত্রুটি সম্পর্কে উদাসীন থাকা। যা একটি মানসিক ঘাতক ব্যাধি।
👉 মৃত্যুকে স্মরণ (মুরাকাবা না করা) না করা।


➤➤   আত্নসমালোচনায় অভ্যস্ত হওয়ার জন্য যা যা করতে হবেঃ
 
👉 মনে পূর্ণাংগ এখলাস, ভয়, ভীতি রেখে নামাজ আদায় করা।
👉 সময় পেলেই জান্নাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করা। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলতেন,
‘তুমি যখন সন্ধ্যা করবে তখন সকাল করার আশা করো না এবং যখন তুমি সকাল করবে তখন সন্ধা করার আশা করো না।অতএব অসুস্থতার পূর্বে তুমি তোমার সুস্থতার সুযোগ গ্রহণ কর এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই জীবনটাকে সুযোগ হিসাবে নাও’ (বুখারী)।

👉 উপন্যাস, কবিতা না পড়ে আউলিয়া কেরাম ও সাহাবাদের জীবনী পড়া এবং শিক্ষা নেওয়া।
👉 নিজের প্রতি সুধারণা না রাখা। নিজের কাজকে বড় করে না দেখা।
👉 নিজের আমলনামা পরিমাপ করা। প্রতিদিন ভাল মন্দ কাজের হিসাব করা।

পরিশেষে বলব প্রকৃত অর্থে নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যে ব্যক্তি সর্বদা সংগ্রাম চালায় সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুজাহিদ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরের সাথে জিহাদে লিপ্ত থাকে’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৬৬৭৯)।

যাই হোক অনেক কথা বললাম। ইনশা আল্লাহ ইচ্ছা থাকলেই আপনার মাঝে আত্নসমালোচনার এই অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। আশা করছি আজ এখন এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে একটা প্রশ্ন প্রতিদিন করবেন যে, আমার যদি এখন মৃত্যু হয় আল্লাহ এর কাছে আমি কি জবাব দিব?

আল্লাহ হাফেজ

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন