সময়ের মাপকাঠি




প্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। এই ব্যস্ততার মাঝে সময় নিয়ে আমরা নিজেরা সময় করে সঠিকভাবে কখনো ভাবার সময়ই পাই না। অথচ এই যে, এই মাত্র গত হওয়া সেকেন্ড টি আর কোনদিন ফিরে আসবেনা, চিরকালের জন্য তা অতীত। আচ্ছা সময় নিয়ে যখন কথা বলছি তখন একটা প্রশ্ন করি আপনাকে, সময় এর কোনো চিত্র একে দেখাতে পারবেন? আমি নিশ্চিত আপনার মাথায় একটি ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের ছবি ভাসছে। ঘড়ি তো সময় মাপার যন্ত্র মাত্র, তাহলে সময় দেখতে কেমন? এর কি কোন ছবি হতে পারে? 
সময় হলো আমাদের ত্রি-মাত্রিক জগতের বাহিরের আর একটি মাত্রা। যাকে চতুর্থ মাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এটি মহাবিশ্বের একটি মৌলিক কাঠামো যা পরিমাপযোগ্য এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। দার্শনিক এরিস্টটল বলেন, "সময় হল সমস্ত অজানা জিনিসগুলির মধ্যে সবচেয়ে অজানা"। 


সময় অদৃশ্য, সময় অসীম, সময় একমুখী। সময়ের এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই আমরা ২০২০ সাল কে ২০১৯ থেকে আলাদা করতে পারি। সময়ের এই একরোখা চলনের জন্য এর কাছে আমরা সবাই বড় অসহায়। সে কারো জন্য অপেক্ষা করে না। এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা

একদম সহজভাবে যদি বলি, নিজেকে আরও প্রোডাক্টিভ করে গড়ে তোলার লক্ষে দৈনন্দিন কাজের জন্য সময়কে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজানোর নামই সময় ব্যবস্থাপনা। এই সহজ বিষয়টিও আমরা গুরূত্ব দেই না, জীবনের তাগিদে সময়ের সঠিক ব্যবহার আমরা কখনো উপলদ্ধিই করি না। এই জন্যই আমরা যা করার কথা ভাবি, তার সব কিছু বাস্তবে করতে পারি না একমাত্র অপরিকল্পিত সময় ব্যবহারের কারণে। যে কোন কাজের শতভাগ আউটপুট পেতে চাইলে এর জন্য দরকার সময়ের সুষ্ঠূ পরিকল্পনা। প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ লাইফ স্টাইল অনুযায়ী সময়কে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারে। এর জন্য দরকার নিজের ইচ্ছা ও মানসিক শক্তি। আমি নিশ্চিত আপনি এই লেখাটি পড়ছেন কারণ আপনিও চান নিজেকে পরিবর্তন করতে। কিন্ত আমরা মাঝে মাঝে সব কাজের প্ল্যান করেও ঐ কাজ সম্পন্ন করি না। সময় অপচয় করি। চলুন এই বিষয়টি আজকে সমাধানের চেষ্টা করব। তার আগে একটা ছোট গল্প বলে নেই। 

তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ি। সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কিছু টপিক এর উপর একটি প্রজেক্ট জমা দিতে বলল স্যার। প্রজেক্টটি সম্পন্ন করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল ১৪ দিন। আমিও ভাবলাম প্রচুর সময় আছে এই প্রজেক্টের জন্য কিছুদিন পর থেকে শুরু করব। সেই আশা নিয়ে নিশ্চিন্তে সময় কাটাচ্ছিলাম। এভাবে চলে গেল ৭ দিন। এরপর টপিকগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করলাম। সময় যতই যাচ্ছে মাথায় টেনশন ও কাজ করছে। দেখলাম আমাকে দেওয়া টপিক গুলোর কোন কপি কারো কাছে নেই, গুগল সার্চ করেও কিছু পেলাম না। পরে জানতে পারলাম এই টপিক গুলো যে বই থেকে দেওয়া তার একটা কপি ডিপার্ট্মেন্ট এর লাইব্রেরীতে রয়েছে। তখন কিছুটা স্বস্তি পেলাম। হাতে সময় বাকি তখনও ৪ দিন। বিপত্তি বাধল আর এক জায়গায়। এর মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় ২ দিনের সরকারি ছুটির জন্য বন্ধ। স্বাভাবিকভাবে সব ডিপার্টমেন্ট ও তখন বন্ধ। তখন ভাবলাম হয়ত প্রজেক্টটি সম্পন্ন করা আর সম্ভব না। সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল আমি ততই টেনশন করতে লাগলাম। নিজেকে নিজে দোষারোপ করতে লাগলাম কেন আরও আগে থেকে শুরু করিনি। তো যাই হোক ২ দিন পর ক্যাম্পাস খুললো। লাইব্রেরী থেকে বই সংগ্রহ করে পরবর্তীতে শেষ ২ দিনের মধ্যে কোনভাবে প্রজেক্ট সম্পন্ন করে জমা দিলাম। 

উক্ত গল্প থেকে আমি একটি জিনিস উপলদ্ধি করতে পারলাম। কোন কাজ সম্পন্ন করার জন্য যদি একটি নির্দিষ্ট তারিখ বা সময় ঠিক করা থাকে তাহলে ঐ কাজটা করার জন্য নিজের মধ্যে একটি স্পিড কাজ করে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি করার মাঝে যেমন কাজে গতি আসে তেমনি নিজেকে আরও বেশি প্রোডাক্টিভ কাজে এংগেইজ রাখা যায়। এ ধরণের সময় ব্যবস্থাপনাকে বলে পারকিনসন'স ল। 

অর্থাৎ কোন কাজ নির্দিষ্ট ডেডলাইন সেট করে কাজ করলে ঐ কাজটা সম্পন্ন করার জন্য নিজের মধ্যেই একটা গতি কাজ করবে। যা আমাদের স্বপ্ন পুরণে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে। বিজ্ঞানি পারকিনসন বলেন, "কোন কাজের প্রসার এই জন্য ঘটে যাতে কাজটি সমাপ্তির জন্য উল্লেখিত সময়ের মধ্যে পূরণ করা যায়"। সময়ানুবর্তিতার অন্যতম একটি নিয়ম হলো একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন/তারিখ/দিন সেট করে কাজ করা বা কাজের প্ল্যান করা।

আশা করছি একটু হলেও আপনার ভাবনার জগতকে আরও প্রসারিত করতে পেরেছি। 
ইনশা আল্লাহ এখন থেকে নিশ্চই সময় নিয়ে এখন একটু হলেও সচেতন হবেন এবং সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন